সিকৃবি প্রতিনিধি: অতি আদরের কুকুর, বিড়াল ও খরগোশ—এই প্রাণীগুলো আজ অনেকের কাছে সন্তানের মতো প্রিয়। এদের প্রতি ভালোবাসা যেমন নিঃস্বার্থ, তেমনি অসুস্থ হলে দুশ্চিন্তার মাত্রাও অনেক। অথচ প্রয়োজনের সময় এই প্রাণীদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য নয়।
সিলেট শহরে পোষা কুকুর, বিড়াল, খরগোশসহ বিভিন্ন প্রাণীর চিকিৎসার জন্য পতিষ্ঠিত হয়েছে বিশেষায়িত একটি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উদ্যোগে টিলাগড়ে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান—প্রফেসর মসলে উদ্দিন আহমেদ ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল (পিএমএসি)।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মাত্র ২৫ টাকা ফি প্রদান করে পোষা ও গৃহপালিত প্রাণীদের চিকিৎসা সেবা নেওয়া যাচ্ছে।
এ হাসপাতালে রয়েছে ডিজিটাল এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, প্যাথলজি, অপারেশন থিয়েটার, ভ্যাকসিন কর্নার এবং মেডিসিন ইউনিট। নামমাত্র খরচে করা হচ্ছে স্পে-নিউটার (বন্ধ্যাকরণ), সিজার, টিউমার অপসারণ, হাড়ভাঙা ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন সার্জারি। এছাড়া গর্ভপরীক্ষা ও বিভিন্ন প্রকার টিকাদান কর্মসূচিও নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিমাসে গড়ে ২০০টির বেশি প্রাণী চিকিৎসা নিতে আসে, যার মধ্যে ৭০ শতাংশ বিড়াল। বাকি প্রাণীর মধ্যে রয়েছে কুকুর, ছাগল, খরগোশ ও বিভিন্ন পাখি।
কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, গরমে বিড়ালের মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর, চর্মরোগ বেশি দেখা দেয়। করোনা মহামারির পর বিড়াল পালনের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এদের চিকিৎসার প্রয়োজনও বাড়ছে।
তবে প্রাণীর জন্য নির্দিষ্ট ওষুধের দাম ও সহজলভ্যতা এখনো একটি চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। অনেক সময় মানুষের ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করতে হয়। প্রাণীদের জন্য নির্দিষ্ট টিকা ও ওষুধ বেশিরভাগই আমদানি করা হয়, যার ফলে দাম বেশি। কিছু কোম্পানি যদিও বিড়াল ও কুকুরের জন্য ওষুধ উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছে, তবে এখনো সেগুলো সীমিত।
সরকারি হাসপাতালে অনেক সময় শুধু ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়, ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়, যা অনেকের সামর্থ্যের বাইরে চলে যায়।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ মুক্তার হোসেন বলেন,
পিএমএসি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল একটি আধুনিক পশু হাসপাতাল, যেখানে প্রাণীদের উন্নত চিকিৎসা, সেবাযত্ন এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম একত্রে পরিচালিত হয়। এই হাসপাতালটি আমাদের দেশের পশুস্বাস্থ্য খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা শুধুমাত্র রোগ নিরাময় নয়, বরং ভবিষ্যৎ ভেটেরিনারিয়ানদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের সুযোগও তৈরি করছে।
আমাদের এখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ চিকিৎসক রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত প্রাণীদের সর্বোচ্চ মানের সেবা নিশ্চিত করে চলেছেন। হাসপাতালটিতে এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ল্যাবরেটরি টেস্টিং, সার্জারিসহ সবধরনের আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। গবাদি পশু থেকে শুরু করে পোষা প্রাণী—সব ধরনের প্রাণীর চিকিৎসা ও পরিচর্যার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে আমরা শুধু পশুদের সুস্থতা নিশ্চিত করছি না, বরং ভেটেরিনারি সেক্টরে এক নতুন যুগের সূচনা করছি।