পবিপ্রবি প্রতিনিধি: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) জীবন যেন এক দীর্ঘ, রঙিন গল্প। আর সেই গল্পের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় হলো ক্যাম্পাস জীবন—যেখানে ধুলো ভরা মাঠের ক্লান্তি, করিডোরে রাত জাগার গল্প, ক্যাফেটেরিয়ায় এক কাপ চায়ের পাশে ভাগ করা স্বপ্ন এবং চোখের কোণে জমে থাকা না বলা কথা মিলেমিশে গড়ে তোলে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও স্মৃতির এক কালজয়ী পাতা।
এই আবেগময় স্মৃতির জাদুতে, এবার প্রথমবারের মতো একসাথে পথচলার গান গাইলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ, সিএসই এবং আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ১১৭ একরের বিস্তীর্ণ ক্যাম্পাসে যেন স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে থাকার মতো এক ছাপ রইল। বিশেষ করে ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ছিল শেষবারের এক বিশেষ যাত্রা।
সকাল ১০টায় বর্ণিল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে সমগ্র ক্যাম্পাসে প্রদক্ষিণ করে টিএসসির সামনে এসে শেষ হয়। যেখানে শিক্ষার্থীরা অংশ নেন উচ্ছ্বাস এবং আবেগের সঙ্গে। এর পর সকাল সাড়ে ১০টায় কেক কাটা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম, যিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেক কেটে এই আনন্দের মুহূর্তকে আরও স্মরণীয় করে তোলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবদুল লতিফ, এবং রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ সুজাহাঙ্গীর কবির সরকার, আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর মোঃ জামাল হোসেন, সহকারী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. সগীরুল ইসলাম মজুমদার, সহকারী প্রক্টর ও ভাইস-চ্যান্সেলরের পিএস ড. মুহাম্মাদ ইকবাল হোসেন, সহকারী রেজিস্ট্রার (কাউন্সিল) মোঃ আবু তাহের উজ্জ্বলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
বিকাল ৪টায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যা ছিল এক বাস্তব আনন্দের উদযাপন। বিখ্যাত ব্যান্ড লালনের পরিবেশনা শিক্ষার্থীদের মন মাতিয়ে তোলে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গানের সুর, নৃত্য এবং কৌতুকের মাধ্যমে অনুষ্ঠানকে রঙিন করে তুলেন। অনুষ্ঠানটি রাত ২টায় সমাপ্তি ঘটে, leaving a trail of অম্লান স্মৃতি এবং বিদায়ের আবেগের ছোঁয়া।
প্রধান অতিথি ভাইস-চ্যান্সেলর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন,”ক্যাম্পাসের প্রতিটি মুহূর্তকে স্মরণে রেখো। এখানকার বন্ধুত্ব, শেখা এবং আনন্দ তোমাদের জীবনের এক অমূল্য সম্পদ হবে। আজকের এই র্যাগ ডে শুধু বিদায় নয়, এটি স্মৃতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। তোমরা ক্যাম্পাসে যে মুহূর্তগুলো কাটিয়েছ, তা জীবনের প্রতিটি পরীক্ষার সময় তোমাদের সাহস জোগাবে। শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের এই মিলনই জীবনের আসল রঙ।”
বিশেষ অতিথি প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবদুল লতিফ এবং রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে বলেন,”একসাথে পথচলা, একসাথে আনন্দ—এই অনুভূতিগুলোই তোমরা জীবনে বহন করবে, আর এগুলো কখনো হারাবে না।”
শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনুভূতি প্রবল ছিল। একজন শিক্ষার্থী বলেন,”আজকের দিনটি শুধু বিদায় নয়, এটি আমাদের ক্যাম্পাস জীবনের সব রঙের সমাহার। আমরা আমাদের স্মৃতির সাথে এই মুহূর্তগুলোকে চিরকাল ধরে রাখব।”
রঙবেরঙের প্রজাপতির মতো আনন্দে, কেকের মিষ্টতা আর সুরের জাদুতে ভরে উঠল পবিপ্রবি ক্যাম্পাস। এই র্যাগ ডে যেন শিক্ষার্থীদের জীবনের স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে—একটি অধ্যায় যা আমরা চিরকাল মনে রাখব।