মোঃ সামিরুজ্জামান, ভোলা প্রতিনিধি: বাংলাদেশের “কুইন আইল্যান্ড” হিসেবে খ্যাত ভোলার শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের দধি সম্প্রতি ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্বীকৃতি জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে, যা খামারি, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মাঝে উৎসাহের জোয়ার এনেছে।
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে লালিত-পালিত লাখো মহিষ এই দধির কাঁচামালের প্রধান উৎস। চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক ঘাস ও অনুকূল পরিবেশের কারণে মহিষের খাদ্যাভাব নেই, যা উৎপাদিত দুধের গুণগত মান বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন এই চর থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ১০ টন দুধ স্থানীয় বাজারে এসে দধিতে রূপান্তরিত হয়। দোকানিরা ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে এই দুধ থেকে তৈরি করেন সুস্বাদু দধি, যা ভোলার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ।
গত ৩০ এপ্রিল সরকার দেশের ২৪টি পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি প্রদান করে, যার মধ্যে ভোলার মহিষের দধি অন্যতম। এই স্বীকৃতি পণ্যটির স্বতন্ত্রতা ও ভৌগোলিক উৎসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে, যা ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
জাকির হোসেন মহিন, জিজেইউএস-এর নির্বাহী পরিচালক ও ভোলার একজন উদ্যোক্তা, বলেন, “জিআই স্বীকৃতির ফলে ভোলার দধি এখন শুধু দেশের মধ্যেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রতিযোগিতা করতে পারবে। এটি আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির জন্য বড় সুযোগ।”
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম খান জানান, “মহিষের দধির এই স্বীকৃতি ভোলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি স্থানীয় খামারিদের আয় বাড়ানোর পাশাপাশি পর্যটন শিল্পকেও উৎসাহিত করবে।”
ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ আজাদ জাহান বলেন, “জিআই স্বীকৃতি ভোলার দধিকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। আমরা এই পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও বিপণনের জন্য স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কাজ করছি।”
এই স্বীকৃতির ফলে ভোলার দধি শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, এটি ভোলার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে আরও সমৃদ্ধ করবে।