সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত “ডক্টরস’ ডায়ালগ অন রাইট টু প্রোটিন” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্সেস (বিএউএইচএস), বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ইউ.এস. সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে।
বিএউএইচএস এর উপাচার্য্য প্রফেসর ডা. ফরিদুল আলম বলেন- আপাত বিচারে মাথাপিছু আয় কম হওয়াকে প্রোটিন বা পুষ্টি ঘাটতির কারণ হিসেবে দায়ী করা হলেও সচেতনতার অভাবকেও এ দায় থেকে মুক্ত করা যায় না। তিনি বলেন- বেসরকারি এমনকি সরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতেও ডিম কিংবা দুধের বিজ্ঞাপন চোখে পড়েনা অথচ প্রতিবেশি দেশে প্রচারিত দারুণ চিত্তাকর্ষক বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সাইন্সেস জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক, প্রফেসর ডা. মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে মানুষকে কোনো বিষয় সম্পর্কে অবহিত করা আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ হয়েছে তবে আচরণে পরিবর্তন আনা অনেক কঠিন একটি কাজ। আশার কথা হলো অধিকাংশ মানুষ এখনও ডাক্তার, পুষ্টিবিদ কিংবা হেলথ প্রফেশনালদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করেন। তাই প্রোটিন ও পুষ্টি বিষয়ক জনসচেতনতা বাড়াতে ডাক্তার ও হেলথ প্রফেসশনালদের এগিয়ে আসতে হবে।
ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের বাংলাদেশ টীম লীড খাবিবুর রহমান কাঞ্চন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। পুষ্টি সূচকে উন্নতি করতে পারলে দক্ষিণ এশিয়ার চিত্র পাল্টে যাবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রোটিন চাহিদা পূরণ করতে হলে আমাদেরকে স্বল্প জায়গায় এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে অধিক পরিমান মাছ, মাংস, ডিম উৎপাদনের কথা ভাবতে হবে। কাঞ্চন বলেন, সয়াবিন এমন একটি শষ্য যা একদিকে যেমন উদ্ভিজ্জ্য প্রোটিনের চাহিদা মেটাচ্ছে অন্যদিকে তেমনি প্রাণিজ প্রোটিন উৎপাদনেও বড় ভূমিকা রাখছে।
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখা’র সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব প্রামাণিক বলেন, পশ্চিম ইউরোপের দেশ মোনাকোর মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি। চীনের একজন মানুষ ৭৫ বছর বয়সেও অনেক বেশি কাজ করতে পারেন। নেদারল্যান্ডসের মানুষেরা এখনকার মত এতটা লম্বা ছিল না। অলিম্পিকের মেডেল তালিকায় আমেরিকা এবং ইউরোপই শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বহুকাল কারণ তাঁরা পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, এক শলাকা সিগারেটের দাম ১৫-১৮ টাকা অথচ পৃথিবীর প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন- একটি ডিমের দাম ১৩ টাকা হলেই তুলকালাম কান্ড বেধে যায়। এ মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. খালেদা ইসলাম বলেন- জাতি গঠনের প্রেক্ষাপটে প্রতিটি নাগরিকের জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। প্রোটিনের ঘাটতি একটি শক্তিশালী জাতিকেও দূর্বল জাতিতে পরিণত করতে পারে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত ও দূর্বল শিশুর জন্মহার, খর্বাকৃতি ও কম ওজনের শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকলে পরিণামে বৃহত্তর সমাজ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।