Friday, August 22, 2025
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
HomeNationalপ্রাণিসম্পদ খাতের অগ্রদূত ড. কাজি ফজলুর রহিমের প্রয়াণ দিবস আজ

প্রাণিসম্পদ খাতের অগ্রদূত ড. কাজি ফজলুর রহিমের প্রয়াণ দিবস আজ

Print Friendly, PDF & Email

বাকৃবি প্রতিনিধি: আজ ২ জুন দেশের খ্যাতিমান প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজি মোহাম্মদ ফজলুর রহিমের প্রয়াণ দিবস। ২০০৪ সালের এই দিনে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি রাজধানীর গুলশানস্থ সিকদার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী গ্রামে ১৯১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করা এই গুণীজন শিক্ষা ও গবেষণায় যেমন ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ, তেমনি ছিলেন সময় সচেতন ও সমাজসচেতন মানুষ। আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি সম্পন্ন করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুলব্রাইট বৃত্তির মাধ্যমে কোয়ানটিটেটিভ জেনেটিক্সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড. ফজলুর রহিমের কর্মজীবনের সূচনা হয় সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে নদিয়া জেলায়। দেশভাগের পর তিনি তেজগাঁওয়ে ইস্ট বেঙ্গল ভেটেরিনারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পিএইচডি শেষে ময়মনসিংহের তৎকালীন ভেটেরিনারি কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কিছুদিন উপ-পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পর পুনরায় শিক্ষকতায় ফিরে আসেন।

১৯৬২ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান বাকৃবি) পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। এরপর তিনি ডীন ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ ও ১৯৭২–৭৩ দুই দফায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। দীর্ঘ কর্মজীবনের ইতি টানেন ১৯৮১ সালে অবসর গ্রহণের মাধ্যমে।

গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পাকিস্তান সরকারের “তমঘা-ই-কায়েদ-ই-আযম” খেতাবে ভূষিত হন, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনার প্রতিবাদে এই খেতাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, দেশের উত্তাল সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং ঘোষণা করেন: “আজ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম স্বাধীন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।” তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় ময়মনসিংহে ‘সংগ্রাম পরিষদ’, যেখানে শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে যেসব শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও শরীরিকভাবে নির্যাতন করেছিল তাঁরা হলেন উপাচার্য ড. কাজী ফজলুর রহিম, ডিন ড. শামসুল ইসলাম, ড. মুস্তফা হামিদ হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক জনাব জাহিদুর রহিম, কর্মচারী জনাব জলিল ও মি. ডেভিড।

তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের একটি ভবনের নামকরণ করা হয়েছে ‘কাজি ফজলুর রহিম ভবন’। ১৯৯৯ সালের ১২ মে তাঁর একমাত্র কন্যা মিসেস ফয়জুন নাহার সাদিক ও তৎকালীন উপাচার্যের উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয় ‘কাজি ফজলুর রহিম লাইব্রেরি’। সেখানে আজও সংরক্ষিত আছে তাঁর ব্যবহৃত একটি চেয়ার।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার উদ্যোগে কাজি ফজলুর রহিমের প্রতিকৃতির একটি ম্যুরালও স্থাপন করা হয়েছে পশুপালন অনুষদের ডিন কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে।

আজকের দিনে দেশ গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে এই গুণী শিক্ষক, বিজ্ঞানী, মুক্তিযোদ্ধা ও মানবদর্শনসম্পন্ন দেশপ্রেমিককে, যিনি তাঁর জীবনব্যাপী আলোকিত করেছেন জাতিকে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments