বাকৃবি প্রতিনিধি: গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পরপরই সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠে। এরই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখোশে আবাসিক হলগুলো নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সারাদেশের ন্যায় বাকৃবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী সেখানে অংশগ্রহণ করে। আন্দোলনে তারাই সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরবর্তীতে সারাদেশে আন্দোলন বড় আকার ধারণ করলে আন্দোলন দমনে তৎকালীন সরকারের অপকৌশলের অংশ হিসেবে তারা হঠাৎই আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানায়। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাকৃবির হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইরান মিয়া ক্যাম্পাসের কোটা আন্দোলনে প্রথমদিকে নেতৃত্বের সুযোগ নিয়ে মূল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। পরবর্তীতে সব দাবি পূরণ হয়ে গেছে এমনটি দাবি করে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হঠাৎ আন্দোলন প্রত্যাহরের ঘোষণা দেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করে। একইভাবে বাকৃবির ফজলুল হক হলের ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ছিলেন আবদুল্লাহ আল মুন্না। ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলেও বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধে তার ব্যাপক সক্রিয়তা দেখা যায়।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপের এডমিন পদ নিয়ে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের সাবেক ও পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখোশে হলের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতীতে তারা ছাত্রলীগের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে এখন ভোল পাল্টিয়ে সাধারণের লেবাসে তৎপরতা চালাচ্ছে এবং হলগুলোতে পুনরায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এ বিষয়ে বাকৃবির চতুর্থ বর্ষের সাধারণ শিক্ষার্থী আল আলিফ বলেন, আমি একান্তই চাই বাকৃবিতে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। তবে ইদানিং দেখা যাচ্ছে বাকৃবির বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের সমর্থনকারীরা ভোল পাল্টে সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশ ধারণ করে হল গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারাই এতোদিন ছাত্রলীগের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে, এখন মুখোশ পাল্টে আবারো হল গুলোতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে উঠে পরে লেগেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১ দফা দাবির সময়ে বাকৃবির অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এর বিরোধিতা করেছিলো। এদের অনেকেই এখন সুশীল সেজে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সকল দাবিকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু কেউ সুশীল সেজে নৈরাজ্যের চেষ্টা করলে তাদের শক্ত হাতে দমন করা হবে।