Friday, March 28, 2025
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
HomeColumnকৃষিবিজ্ঞানের নয়া দিগন্ত উন্মোচনে আফ্রিকান আম

কৃষিবিজ্ঞানের নয়া দিগন্ত উন্মোচনে আফ্রিকান আম

Print Friendly, PDF & Email

অধ্যাপক ডঃ কাঞ্চন কুমার ভৌমিক (ভারত): যে প্রশ্নটা সারা বিশ্ব আম মহলের, আফ্রিকান আম (Irvingia gabonensis) আমাদের এশিয়ান আমের (Mangifera indica) চেয়ে কতটা ভাল। আমাদের এশিয়ান আমের (Mangifera indica) উপর অনেক গবেষণা হয়েছে । আমের বহু প্রজাতি এবং বিশ্বমানের যোগ্যতা অর্জন করেছে। এবার সময় এসেছে আফ্রিকান আম (Irvingia gabonensis) এর মিশ্রনে নতুন কিছু ভাবনার। আজকেও বাজার থেকে কয়েক কেজি আম কেনা হল, দামটা ক্রমে কমতে শুরু করেছে, ১ কেজির দাম প্রায় ৫,০০০ গিণি ফ্রাঙ্ক বা হাফ ডলারের একটু বেশি যা ভারতীয় মুদ্রায় ঐরকম, ৪০ টাকার কাছাকাছি়।

ঔষধি গুনের পাশাপাশি, আমের আকার, আমের স্বাদ, আস্বাদন, আমের পাল্পের গঠন, গ্রথন, আমের কালার, আমের আঁটির আঁশ বা ফাইবার অংশ ইত্যাদি এরকম হাজারো প্যরামিটার আছে। আসলে, আমাদের বিজ্ঞানী মহলের হাজার হাজার কয়ারিজ, তাই বারবার স্বাদ নিচ্ছি আর মনে মনে আলেকজান্ডার কিংবা হিউয়েন সাং-এর এশিয়ান আমের (Mangifera indica) জনপ্রিয়তার কথাগুলো গভীরভাবে অনুসন্ধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং পরবর্তী কিছু ট্রায়াল ও টেষ্টের অপেক্ষায়। এখানকার কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং স্থানীয়ভাবে যতটুকু জেনেছি আমাদের এশিয়াতে আমের পরবর্তী গবেষণায় এই আফ্রিকান আম নয়া মোড় নিতে পারে।

সারাবছর ধরে ফলন হতে থাকা এই আমে খাদ্যগুনের পাশাপাশি ঔষধিগুনও প্রচুর। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রগুলি থেকে খুব সাড়া পাচ্ছি। আমরাও তাকিয়ে থাকবো এই বিশ্বায়নে ন্যনো-বায়ো টেকনোলজির অসামান্য সাফল্যের, আমাদের এশিয়ার আম ও এখানকার আফ্রিকান আমের সংমিশ্রনে আম গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।

গ্রাফ্টিং, টিস্যু কালচার তথা ফার্মাসিটিউক্যল কোম্পানীর নয়া দিখন্ত উন্মোচনে এই আম বড় ভূমিকা নেবে যা শুধুই সময়ের অপেক্ষা। এদেশে এসেছি সেই জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে ল্যন্ড করার পর থেকেই বেশ কিছু বিষয়ে ভীষন অবাক হচ্ছি। রাস্তায় সারি সারি আমগাছে আমের ফলনে একেবারে গাছ ভর্তি এবং সারাবছর ধরে আফ্রিকান আম (Irvingia gabonensis) ফলছে। এদেশে শীতকাল হয়না। আফ্রিকান আম (Irvingia gabonensis) কোথাও মুকুল, কোথাও মন্জুরী বা কোথাও কাঁচা পাকা অবস্থায়। ছুটলাম এদেশের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র গুলিতে।

আমাদের দেশে এশিয়ান আমেও প্রসঙ্গ টানলাম। গল্প করতে করতে এশিয়ান আমে (Mangifera indica) জনপ্রিয়তা ও আমাদের জাতীয় ফলের তকমাও টানলাম। বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে আম জন্মে ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, ব্রাজিল এমনকি আন্দিজের উষ্ণতম অঞ্চল যেমন পেরুতে। স্পেন হলো একমাত্র ইউরোপীয় দেশ যেখানে আম জন্মে- মালাগার তুষাপাত মুক্ত এলাকায়।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আম উৎপন্ন হয় ভারতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে বছরে ১৮ মিলিয়ন টন আম উৎপন্ন হয়- যা কিনা বিশ্বে মোট আম উৎপাদনের ৪০%। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যে এক শতাংশেরও কম আম তার যোগান দেয়, বেশিরভাগ দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদাতেই লেগে যায়। আজ এশিয়ার আমও বিশ্বের দরবারে, একটি নয়, তিনটি দেশের (পাকিস্তান, ভারত আর ফিলিপাইনে) জাতীয় ফল আম।

খ্রীষ্টপূ্র্ব ৩২৭-এ, আলেকজান্ডার সিন্ধু উপতক্যায় আম দেখে ও খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এসময়ই আম ছড়িয়ে পড়ে মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ এবং মাদাগাস্কার। চাইনিজ পর্যটক হিউয়েন সাং ৬৩২ থেকে ৬৪৫ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে এ অঞ্চলে ভ্রমণে এসে বাংলাদেশের আমকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করান। ১৩৩১ খ্রীষ্টাব্দ থেকে আমচাষ শুরু হয়। এরপর ১৬০০ শতাব্দীতে পারস্য উপসাগরে, ১৬৯০ সালে ইংল্যান্ডে কাঁচে ঘে, ১৭০০ শতাব্দীতে ইয়েমেনে, উনবিংশ শতাব্দীতে ক্যারিনার দ্বীপপুঞ্জে, ১৮৬৫ খ্রীষ্টাব্দে ইতালিতে আমচাষে খবর জানা যায়। ১৮৬৫ খ্রীষ্টাব্দে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে মাটিতে প্রথম আমের আঁটি থেকে গাছ হয়। এভাবেই আম ফলটি বিশ্ববাসীর দোড়গোড়ায় পৌঁছে যায়। মোঘল সম্রাট আকবর ভারতে শাহবাগের দাঁড়ভাঙ্গায় এক লাখ আমে চারা রোপণ করেন ও উপমহাদেশে প্রথম একটি উন্নত জাতের আম বাগান সৃষ্টি করেন। ভারতে প্রথম আম জন্মে পাঁচ হাজার বছর আগে, হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে ভারত, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে (বঙ্গোপসাগে একটি দ্বীপপুঞ্জ) এবং মিয়ানমারে প্রথম বন্য আম উৎপন্ন হয় বলে মনে করা হয়।

লেখকঃ মূখ্য কৃষিবিজ্ঞানী (সুসংহত কৃষি), ডে-এন.আর.এল.এম, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রনালয়, ভারত সরকার।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments