নিজস্ব প্রতিনিধি: জেলা কৃমিন প্রজনন কেন্দ্র, বরিশাল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজনন কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি মোট ৩.৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এর ভবন নির্মিত হয়েছে ১৯৬৩ বর্গমিটার আয়তনে। এলডিপির অর্থায়নে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। এই কেন্দ্রটি বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুর – এই চারটি জেলা নিয়ে গঠিত এবং উক্ত জেলাগুলোর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমের মূল নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির দায়িত্ব পালন করে।
কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ: কেন্দ্রটির প্রধান কার্যক্রম হলো গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধি। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করে পশুর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা এই কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য। মাঠ পর্যায়ে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি মাঠকর্মী ও খামারিদের কারিগরি সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হয়।
জাতীয় কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালা অনুসারে কেন্দ্রটি তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। উপসহকারী প্রজনন কর্মকর্তা (কৃত্রিম প্রজনন), এআই টেকনিশিয়ান এবং অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করা হয়।
এছাড়া উন্নত বীজের মাধ্যমে ষাঁড় উৎপাদন, স্থানীয় ষাঁড় প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনা, উন্নত জাতের বীজ ও ঘাস কাটিং বিতরণ এবং খামারিদের মধ্যে ঘাস চাষ সম্পর্কিত পরামর্শ প্রদানও কেন্দ্রটির অন্যতম দায়িত্ব। পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য পরিদর্শন ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে খামারিদের উৎপাদন বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করা হয়।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের অর্জন: ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বরিশাল জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র চমৎকার সাফল্য অর্জন করেছে। নির্ধারিত বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অর্জনের হার গড়ে ১১৬ থেকে ১১৮ শতাংশের মধ্যে ছিল। হিমায়িত সিমেনের মাধ্যমে মোট ৮৪,৩৭৮টি কৃত্রিম প্রজনন সম্পন্ন হয়েছে, যা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ১১৬ শতাংশ।
শংকর জাতের বাছুর উৎপাদন ছিল ২৮,৬৫০টি, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১১৬ শতাংশ। স্বাভাবিক দাগী প্রজননের ক্ষেত্রেও সফলতা ছিল উল্লেখযোগ্য — অর্জন ১১৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
জেলাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর – এই চারটি জেলাই নির্ধারিত লক্ষ্য অতিক্রম করেছে। বরিশাল জেলার অর্জন ছিল ১১৭ শতাংশ, ভোলায় ১১৯ শতাংশ, ঝালকাঠিতে ১১৮ শতাংশ এবং পিরোজপুরে ১১৬ শতাংশ।
এই ধারাবাহিক সাফল্য কেন্দ্রটির কার্যক্রমের গুণগত মান, মাঠ পর্যায়ের কার্যকর তদারকি এবং কারিগরি দক্ষতার একটি প্রমাণ বহন করে।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ও অগ্রগতি
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বরিশাল জেলা কৃমিন প্রজনন কেন্দ্র নতুন করে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ বছর হিমায়িত সিমেন দ্বারা কৃত্রিম প্রজননের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫,০০০টি। অক্টোবর ২০২৫ মাস পর্যন্ত এই লক্ষ্যের ২৭.৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।
শংকর জাতের বাছুর উৎপাদনের বার্ষিক লক্ষ্য ১৪,০০০টি, যার মধ্যে অক্টোবর মাস পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৪,৮১২টি, অর্থাৎ ৩৪ শতাংশ। স্বাভাবিক ছাগী প্রজননের লক্ষ্যমাত্রা ৬০০টি, যার মধ্যে ইতোমধ্যে ২৩১টি সম্পন্ন হয়েছে, যা মোট লক্ষ্যের ৩৮.৫ শতাংশ।
এই অগ্রগতি ইঙ্গিত দেয় যে কেন্দ্রটি বছরের শেষ নাগাদ পূর্ববর্তী বছরের মতোই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে।
সার্বিক মূল্যায়ন
বরিশাল জেলা কৃমিন প্রজনন কেন্দ্র দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে স্থানীয় গবাদিপশুর জাতের উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, দুধ ও মাংস উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের প্রচেষ্টায় এই কেন্দ্র একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের আন্তরিকতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং নিয়মিত তদারকির ফলে কেন্দ্রটির কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ কেন্দ্রটি আরও উন্নত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।



