Friday, March 28, 2025
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
HomeTechnology-Innovationকৃষক ও ব্যবসায়ীদের মাঝে সাড়া ফেলেছে বগুড়ার সন্তান হাবিপ্রবি শিক্ষক ড.সাজ্জাতের উদ্ভাবিত...

কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মাঝে সাড়া ফেলেছে বগুড়ার সন্তান হাবিপ্রবি শিক্ষক ড.সাজ্জাতের উদ্ভাবিত গ্রেইন ড্রায়ার 

Print Friendly, PDF & Email

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: কৃষক ও ব্যাবসায়ীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে বগুড়ার কৃতী সন্তান ও দিনাজপুরের  হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের  শিক্ষক  প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকারের  উদ্ভাবিত শস্য শুকানোর প্রযুক্তি টু-স্টেজ গ্রেইন ড্রায়ার। 

হাবিপ্রবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর  ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকারের নেতৃত্বে একদল গবেষক ২০১৮ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (KGF) অর্থায়নে ড্রায়ারটি উদ্ভাবনের গবেষণা কাজ শুরু করেন।

ড. সাজ্জাতের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশ এবং বৈরী আবহাওয়াতে খুব দ্রুত সময়ে সীমিত খরচে ধান, গম, ভুট্টা, সবজি এবং ফল শুকানো যাচ্ছে।এছাড়া আর্দ্রতা ১২-১৪ শতাংশে নিয়ে আসার সুবিধা থাকায় দিন দিন ধান, ভুট্টাচাষি ও ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হাবিপ্রবি শিক্ষকের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তিটি।

হাবিপ্রবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর  ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার  ও তার গবেষণা দলের  নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তায়  বৈরী সময়ে শস্য শুকানোর জন্য এই ড্রায়ার মেশিনটি উদ্ভাবন করেছেন। 

চাতালের মতো একই খরচে আর্দ্রতা ১২-১৪ শতাংশে নিয়ে আসার সুবিধা এবং বৈরী আবহাওয়াতেও শুকানোর সুবিধা থাকায় দিন দিন শস্য শুকানোর এই ড্রায়ারের চাহিদা বেড়েই চলছে।

হাবিপ্রবি শিক্ষকের উদ্ভাবিত এইচএসটিউ মাল্টিক্রপ ড্রায়ার -মডেল ১ দিয়ে ধান (সিদ্ধ ও আতপ) এবং ভুট্টা শুকানো যায়।ধান,গম এবং ভুট্টার বীজও শুকানো যায়। দুই থেকে তিন ব্যাচে ড্রায়ারটি দৈনিক ৬০০ – ৮০০ মণ ধান শুকানো যায়। ১ – ২ জন দক্ষ শ্রমিক খুব সহজেই ড্রায়ারটি চালাতে পারেন।প্রতি ব্যাচ ধান,ভূট্টা শুকানোর জন্য ৩৫০- ৪৫০ কেজি তুষ লাগে।প্রতি ব্যাচে ১০০-১২০ ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে।আদ্রতা ভেদে ৪-৫ ঘন্টা সময়ের মধ্যে শস্য শুকানো যায়। তবে বীজ শুকাতে ৮-১০ ঘন্টা সময়  লাগে।প্রতি কেজি শুকাতে বর্তমান বাজারে  মাত্র ৮০-১২০ পয়সা খরচ হবে।

শুকনো শস্যের গুণগত মানের কোনো ক্ষতি সাধিত হয় না।ড্রায়ারটি স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে দেশীয় প্রযুক্তিতে ও দেশীয় মালামাল দিয়ে তৈরি করা যায়। সেইসাথে ড্রায়ারের স্পেয়ার পার্টসগুলোও সহজলভ্য। উক্ত ড্রায়ারটি পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে না।

এইচএসটিউ মাল্টিক্রপ ড্রায়ার -মডেল ২ ( HSTU Multi-crop Dryer Model 2) দিয়েও ধান,ভুট্টার মতো শস্য এবং ধান,গম এবং ভুট্টার বীজ শুকানো যায়। এই ড্রায়ারটিতে দৈনিক দুই থেকে তিন ব্যাচে ৪০০- ৬০০ মণ শস্য শুকানো সম্ভব। এই ড্রায়ারটিও  দুইজন শ্রমিক দিয়ে চালানো যায় এবং প্রতি ব্যাচে ৩০০-৪০০ কেজি তুষ প্রয়োজন হয়।আর প্রতি ব্যাচে ৬৫-৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। আদ্রতা ভেদে শুকাতে মাত্র ৭০-১০০ পয়সা টাকা খরচ হয়।

তার আরেকটি উদ্ভাবন হলো এইচএসটিউ ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল  ড্রায়ার(HSTU Fruit and Vrgetable Dryer)  । মাঝারি ধরনের এই ড্রায়ারে প্রতিদিন দুই ব্যাচে ২০ -৩০ কেজি শাক সবজি এবং ফলমূল শুকানো যায়। ড্রায়ারটিতে ৬-১৪ ঘন্টার মাঝেই আম,কাঁঠাল, মিষ্টি আলু,কলা,কাজু বাদাম,টমেটো,আলু,গাজর, মিষ্টি কুমড়া শুকানো সম্ভব। 

আরোও  আকর্ষণীয় একটি উদ্ভাবন হলো: এইচএসটিউ মোবাইল গ্রেইন এন্ড সিড ড্রায়ার (HSTU Mobile Grain and Seed Dryer) যেটি দিয়ে ধান,ভুট্টার মতো শস্য এবং ধান,গম এবং ভুট্টার বীজ শুকানো যায়। দুই থেকে তিন  ব্যাচে এতে দৈনিক ৪০- ৬০ মণ শস্য শুকানো যায়। মাত্র দুইজন পুরুষ বা মহিলা খুব সহজে ড্রায়ারটি পরিচালনা করতে পারেন।ড্রায়ারটি ইলেক্ট্রিক হিটার কিংবা এলপিজি গ্যাসের সাহায্যে চালানো যায়। ৪-৬ ঘন্টার মধ্যে শস্য শুকানো যায় আর বীজ শুকাতে ৮-১২ ঘন্টা সময় লাগে। প্রতি কেজি ধান,ভুট্টা শুকাতে মাত্র ১.০০-২.৫০ টাকা খরচ হয়। ড্রায়ারটি দ্বারা পরিবেশের  তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। 

ইতিমধ্যে দিনাজপুরের রানীগঞ্জ মোড় এ সৈয়দা  এলমিস চৌধুরী রাইস মিলে ধান, ভুট্টা শুকানোর ড্রায়ারটি ব্যাবহার করা  হয়েছে। এছাড়াও দিনাজপুরের বিরল উপজেলার জগতপুরে রিচ ফিড  এন্টার প্রাইজ মিল টিতে  ড. সাজ্জাতের উদ্ভাবিত  গ্রেইন ড্রায়ার স্থাপিত হয়েছে এবং সেটি লাভজনকভাবে পুরোদমে  পরিচালিত হচ্ছে । 

গ্রেইন ড্রায়ারের উদ্ভাবক গবেষক প্রফেসর  ড. মো: সাজ্জাত হোসেন বলেন আমাদের দেশে আগে এই ধরনের কোন প্রযুক্তি ছিলো না। বর্তমানে বানিজ্যকভাবে শস্য শুকানোর কার্যক্রম চলছে এবং ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি। ড্রায়ারের সহজলভ্যতা হলে কৃষক ও ব্যাবসায়ীরা উপকৃত হবেন।

এই গবেষক আরো বলেন, কৃষি বিপ্লব ছাড়া বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব না।কারণ বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ।কৃষিকে যান্ত্রীকিকরণ এবং বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে কৃষি বিপ্লব ত্বরান্বিত করা সম্ভব। 

 আর এই কাজটিতে আমাদের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি সমূহ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এদেশের অধিকাংশ মানুষ বিভিন্নভাবেই কৃষির সাথে জড়িত। বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতিবছর ফসল শুকাতে না পেরে অনেক ধান, ভূট্টা চাষী এবং ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। আর আমাদের উদ্ভাবিত ড্রায়ারটির মাধ্যমে যেকোন আবহাওয়াতেই দানা জাতীয় সব ধরনের শস্য শুকানো যায় । ফলে আর্থিকভাবে আগে যে ক্ষতি হতো সেটি আর হবে না। দেশের প্রতিটি উপজেলায় যদি সরকারিভাবে শস্য শুকানোর জন্য এ ধরনের একটি ড্রায়ার স্থাপন করা হয়, তাহলে একদিকে কৃষকেরা যেমন উপকৃত হবে অন্যদিকে ফসল নষ্টের যে সমূহ সম্ভাবনা সেটা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে। এছাড়াও এই ড্রায়ার সরকারের ধান, চাল সংগ্রহে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তিনি তার গবেষক দলের সদস্যদের প্রতি,  কৃষি মন্ত্রণালয়ের কেজিএফ ই (KGF) এর প্রতি এবং  হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি গভীর  কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার বগুড়ার শেরপুর উপজেলাধীন ভবানীপুর  ইউনিয়নের বড়াইদহ গ্রামের সরকার পরিবারের সন্তান। প্রফেসর সাজ্জাত সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত ছোনকা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরবর্তীতে ১৯৮৪-৮৫ শিক্ষাবর্ষে চান্দাইকোনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।তিনি ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে কৃতীত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ইউনিভার্সিটি পুতরা মালেশিয়া (ইউপিএম) থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এই শিক্ষক। তারা মা-বাবার আট সন্তান। তার আরেক ভাই প্রফেসর ড.এস এম কামরুল হাসান হাবিপ্রবিতে ফুড প্রসেসিং এন্ড প্রিজারভেশন বিভাগ শিক্ষকতা করছেন।তিনি বর্তমানে অত্র বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করছেন। 

উল্লেখ্যঃ প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে বিগত সময়ে ডীনের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেইসাথে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বড়াইদহ গ্রামের কৃতি সন্তান। 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments