Tuesday, November 12, 2024
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
HomeCampusবাকৃবিতে শিক্ষার্থীকে মারধর, প্রক্টরের কাছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বাকৃবিতে শিক্ষার্থীকে মারধর, প্রক্টরের কাছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

Print Friendly, PDF & Email

বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শাহজালাল হলে মিটিংয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও হত্যা হুমকির অভিযোগ পাওয়া যায়। অন্যদিকে ঘটনাটি মিথ্যা ও ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর জন্য করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনুপ পাল তাকে মারধর এবং হিন্দু ধর্মের হওয়ায় সংখ্যালঘু ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে চারজনের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযুক্ত চার জন হলেন— ভেটেরিনারি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম পলাশ ও সানজান ইসলাম মুন্না এবং পশুপালন অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম—উল—ইসলাম এবং জাকারিয়া সাঈদ। তবে অভিযুক্ত এই চার জন তাদের প্রতি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করে ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানো হচ্ছে বলে অনুপের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। এদিকে  অভিযুক্ত চারজন শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিল বলে জানিয়েছেন শাহজালাল হলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। 

জানা যায়, তারা প্রত্যেকেই বাকৃবির শাহজালাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) উভয়পক্ষের অভিযোগ পত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকৃবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম।
অনুপ পাল তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, ‘গত ২৮ তারিখ রাতে শাহজালাল হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রভোস্ট স্যারের উপস্থিতিতে হলের সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য একটা সাধারন মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। উক্ত মিটিংয়ে একই হলের ছাত্র সাইফুল ইসলাম পলাশ অজানা কারনে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে যেতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে তার নিষেধ অমান্য করে কয়েকজন শিক্ষার্থী মিটিংয়ে গেলে প্রাক্তন ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম—উল—ইসলামকে নিয়ে পলাশ ও তার সহপাঠীরা আমাকে এবং আমার সহপাঠীদের নানাভাবে হেনস্থা করে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে প্রাক্তন ছাত্রলীগকর্মী ফাহিম—উল—ইসলাম, সাইফুল ইসলাম পলাশ, জাকারিয়া সাঈদ ও সানজান ইসলাম মুন্না বেশ কয়েকজন আমার নিজ কক্ষ ২০১/এ তে প্রবেশ করে আমাকে মেঝেতে ফেলে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি দিতে থাকে। পরবর্তীতে অন্যান্য সহপাঠীরা বাধা দিলে তারা সেখান থেকে চলে যায় এবং আমাকে হিন্দু ধর্মের হওয়ায় সংখ্যালঘু ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। প্রশাসনের নিকট আমি এর বিচার এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে জাকারিয়া সাঈদ অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, ‘গত ২৯ শে অক্টোবর তারিখে আমাদের সহপাঠী অনুপ পাল ব্যাক্তিগত আক্রোশের ভিত্তিতে আমাদের সবার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য বলে উল্লেখ করে। যার প্রেক্ষিতে আমরা পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে নানা হেনস্থার সম্মুখীন হচ্ছি। উল্লেখ্য যে, অনুপ পাল নিজে নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল ও গেস্টরুম কালচারের মাধ্যমে অনেক জুনিয়র এর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন করেছে। যার সত্যতা আমরা এই দরখাস্তের সাথে সংযুক্ত করে দিচ্ছি। তার বর্ণনাকৃত ঘটনা যার প্রেক্ষিতে সে অভিযোগ করেছে সেই সময় আমাদের লেভেলের ১২ থেকে ১৫ জন উপস্থিত ছিল। সেখানে অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারনে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হলেও মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং তার অভিযোগে সংখ্যালঘু উল্লেখ করে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যার সত্যতা স্বরূপ আমাদের হলের হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর প্রদান করেছে।’

অনুপ পালের অভিযোগটিকে ব্যক্তিগত আক্রোশে পূর্ণ উল্লেখ করে শাহজালাল হলের চতুর্থ বর্ষের পাঁচ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সহ ২৫ জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষর প্রদান করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতে তারা বলেন, অনুপ পালের সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং ব্যক্তিগত আক্রোশে পূর্ণ। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য সকলকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আশা করি মাননীয় প্রক্টর মহোদয় বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

এছাড়া অনুপকে বয়কট করে শাহজালাল হলের তৃতীয় বর্ষের ২৪ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সহ একটি বিবৃতি প্রক্টর বরাবর জমা দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত চারজন শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো প্রকার অভিযোগ নেই। বরং অভিযোগকারী শিক্ষার্থী অনুপ পাল ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল এবং তার বিরুদ্ধে গেস্ট রুমে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রদান করে হলের ভাবমূর্তি নষ্ট করায় তাকে আমরা শাহজালাল হল ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা সর্বাত্মকভাবে বয়কট করলাম।
এছাড়া অনেকে রুমমেট এবং চতুর্থ বর্ষের পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রিমেল ও মো. আসিফ ইকবাল আল—আমিন আলাদা বিবৃতিতে অনুপের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছেন। তারা উল্লেখ করেছেন, ‘পলাশ এবং জাকারিয়া ছাত্রলীগের সাথে কোন সময় যুক্ত ছিলো না। সাম্প্রদায়িকতার বিষয়ে কোন কথা হয় নি। ফ্লোরে ফেলে মারার অভিযোগ ভিত্তিহীন। মুন্না এবং ফাহিম লিস্টেট হওয়ার আগেই ছাত্রলীগ ছেড়ে দিয়েছে। পুরো লেভেলের উপর অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

এ ব্যাপারে অনুপের রুমমেট ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আল—আমিন বলেন, ঘটনার দিন আমি রুমে ছিলাম। পলাশের সাথে অনুপের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে পলাশ অনুপকে মারতে গেলে আমার ব্যাচমেটরা তাকে আটকায়। পলাশকে আটকানোর সময় অনুপের শরীলে ঘুষি বা লাথি লাগতে পারে কিন্তু ফ্লোরে ফেলে এলোপাতাড়ি মারের ঘটনা ঘটে নি এবং ওই রুমে সবাই অবস্থান করা কালীন সময়ে সংখ্যালঘু জাতীয় কোনো কথা হয় নি।
পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে অনুপ পাল বলেন, আমি হলের ডাইনিংয়ের দায়িত্বে আছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেই আমাকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রভোস্ট স্যারকে না জানিয়ে কিছু শিক্ষার্থীকে হলে উঠানোর পায়তারা চলতেছিলো এমন একটি খবরের ভিত্তিতে একটি মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। পরবর্তীতে আমাকে মারার জন্য লোহার রড না পেয়ে ঝাড়ু, ভাঙ্গা আয়না ও ডাম্বেল দিয়ে মারতে উদ্যত হয় পলাশ। তখন সবাই পলাশকে থামায়। সবাই ঠেকানোর পরেও পলাশ আমাকে মেরে বিছানা থেকে ফেলে দেয়। আমি বিছানায় উঠে বসলে আবারো আমাকে বিছানার উপর ফেলে মারধর করে এবং শাহজালাল হলের ব্যাপারে যদি পরবর্তীতে কোনো কিছু বলি তাহলে আমার টুটি টেনে ছিড়ে ফেলবে বলেও হুমকি দেয়।আমার কাছে ডাইনিং এর দায়িত্ব চাইতো আমি দিয়ে দিতাম, এমনিতেই আমার এক মাস দায়িত্ব পালন করা শেষ। সাধারণ একটা বিষয় নিয়ে এমন করা আসলেই অপ্রত্যাশিত।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, উভয় পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। উভয় পক্ষই সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছে। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments