এআই কৃষি পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে যাতে কৃষিতে মানুষের শ্রম কমানো যায় এবং কৃষি কাজে দক্ষতা বাড়ানো যায়। কোন সন্দেহ নেই যে ফসলের উৎপাদন, গুণমান এবং শ্রম প্রথাগত থেকে এখন অনেক বেশি কার্যকর। বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বেড়ে ২০৫০ সালে আনুমানিক ১০০০ কোটি, খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যাবে ৩৫%-৫৬% অন্যদিকে চাষযোগ্য জমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ ও কমে যাবে ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংসহ ‘স্মার্ট’ কৃষিতে বৈশ্বিক ব্যয় ২০২৫ সালের মধ্যে তিনগুণ বেড়ে ১৫৩০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে (ফোর্বসের)। কৃষিতে এআই এর বাজারের আকার ২০% এর যৌগিক বার্ষিক বৃদ্ধির হার, ২০২৬ সালের মধ্যে ২.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। প্রিসিশন এগ্রিকালচারে এআই এর সাহায্যে করা সম্ভব। মাটিতে মাইক্রো এবং ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস ফসলের স্বাস্থ্য এবং ফলনের পরিমাণ এবং গুণগতমান বৃদ্ধিতে এআই এর ব্যবহার অত্যাবশক। উন্নত ফসলের স্বাস্থ্যের জন্য সামঞ্জস্য করার জন্য ফসলের বৃদ্ধি এবং পরিবেশের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া বোঝা ফসল বৃদ্ধির পর্যায়গুলি পর্যবেক্ষণ করাও অত্যাবশ্যক। শস্যের পরিপক্বতা এবং মাটির গুণমান সনাক্ত করতে পারে ।
সাধারণত, মাটি মূল্যায়ন করার জন্য কৃষকদের নমুনা উঠিয়ে নিয়ে ল্যাবে নিয়ে যেতে হয় যা সময় এবং শক্তি ব্যয় সাপেক্ষ। তবে, গবেষকরা নির্দিষ্ট করেছে যে একটি সস্তা হ্যান্ডহেল্ড মাইক্রোস্কোপ থেকে চিত্র ডেটা ব্যবহার করে একটি অ্যালগরিদমকে একই কাজটি করতে পারে। চিত্র সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, এখন উদ্ভিদ রোগ এবং পোকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সনাক্তকরণ করা যায়। এটি চিত্র শ্রেণীবিন্যাস, সনাক্তকরণ এবং চিত্র বিভাগীকরণ পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে কাজ করে যা উদ্ভিদের স্বাস্থ্যের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
এআই সম্পন্ন ইউএভি (ড্রোন) দ্বারা পেস্টিসাইড বা সার একইভাবে শস্যের উপর স্প্রে করা সম্ভব। কীটনাশক স্প্রে করার নির্ভুলতা এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে সঠিকভাবে স্প্রে এলাকার সময়সীমার মধ্যে চিত্রানুসন্ধান করে, ইউএভি স্প্রেয়ারগুলি স্প্রে করতে পারে এবং স্প্রে করার পরিমাণ এবং এলাকার দৈর্ঘ্য দুটি দিকেই উচ্চতা নির্ণয় সম্ভব। এটি সম্পূর্ণ ঝুঁকি কমায়। জমি জরিপ এবং ফসলের উপর নজর রাখার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ভিশন এলগরিদম মেশিন লার্নিং সঙ্গে যুক্ত করে রোবট তৈরি করলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাছপালা সংগ্রহ করতে পারে। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোবটের মাধমে নিখুতভাবে অপ্রয়োজনীয় উদ্ভিদ বাছাই করতে ব্যবহৃত হয়।
এআই ড্রোন এবং উপগ্রহ থেকে চিত্রাবলী ও আবহাওয়ার নিয়ামকসমূহ বিশ্লেষণ করতে পারে যাতে কৃষক ফসল সঠিক সময়ে সংগ্রহ করতে পারে । ক্যামেরা, সেন্সর এবং মনিটর থেকে ডেটা প্রসেস করা, বিশ্লেষণ করা এবং রোবটিক ফল পিকার এবং শস্য নিয়ন্ত্রণ লেজার সহ বিদ্যমান যন্ত্রপাতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ড্রোন এবং এআই সিস্টেমগুলি পর্যবেক্ষণ এবং অটোমেশন বাড়িয়ে কৃষিকে শিল্পে রুপান্তরিত করতে পারে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে পরিচালিত হলে মোবাইল ফোন আপডেট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে যা ফসল ব্যবস্থাপনা ও সংগ্রহের সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ । আকার, আকৃতি, রঙ এর জন্য ফল এবং শাকসব্জী পরিদর্শন করে, কম্পিউটার নির্ভুলভাবে গ্রেডিং প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় করতে পারে ।
এআই এর সুনিপন ও দক্ষ এবং টেকসই উত্তম কৃষি অনুশীলন বাংলাদেশের কৃষিকে বানিজ্যিকিকরণে শিল্পের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পারে। এআই অগ্রগতি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে কয়েক বছর সময় নিতে পারে, প্রাথমিক বিনিয়োগের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সরকারের সদিচ্ছা কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এআই (সম্পর্কিত গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন) এর জন্য বাজেট বৃদ্ধি ও বেসরকারী কোম্পানীর বিনিয়োগের মাধ্যমে কৃষিতে ব্যাপক অবদান রাখতে পারে ।
মো. ইব্রাহীম আলী, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, বিনা ।