বাংলাদেশে ১৯৬১ সালে সয়াবিন তেল আমদানি শুরু হয় পরিমাণ ছিল ১৪২৩০ টন এবং ১৯৭৯ সালে ১ম পাম তেল আমদানি শুরু হয় । আবূল খায়ের গ্রুপ ১ম সয়াবিন আমদানি শুরু করে । পৃথিবীর ৯৮% সয়াবিন উৎপাদিত হয় ১৫ টি দেশে। এর মধ্যে শীর্ষে ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, চীন। আশির দশকে রিলিফ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দেশে, সয়াবিন তেলের ব্যবহার শুরূ হয়। সয়াবিন তেলে ভিটামিন ই এন্টি অক্সিডেন্ট উপস্থিত। এটি মানবদেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, সয়াবিন হাড় চোখ ও ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে। অতিরিক্ত সয়াবিন তেল ব্যবহারের ফলে মানব শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে, এটি মানবদেহে এন্টিনিউট্রিয়েন্ট হিসেবে কাজ করে যা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭ তম। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৪ লাখ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ টন সয়াবিন উৎপাদিত হয়, এর ৬০% ই লক্ষীপুর জেলায়, ভোজ্যতেলের ৯০% বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, এত ব্যয় হয় ২৫-২৮ হাজার কোটি টাকা।
ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রি. পূর্ব ৩০০০ থেকে সরিষা ব্যবহার হয়ে আসছে। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে আমাদের দেশের রান্নার প্রধান তেল ছিল সরিষা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরিষার আবাদ হয়েছিল ৬.০১ লাখ হে. ২০২১-২২ অর্থ বছরে সরিষার আবাদ হয়েছিল ৭.৯৮ লাখ হে. অথাৎ এরিয়া বেড়েছে ২৫.৮৬ % (ডি.এ.ই)। স্বাস্থ্য সম্মত ভোজ্য তেলে যে সমস্ত গুন থাকা প্রয়োজন তার সবগুলিই রয়েছে সরিষার তেলে, অন্ত্রে পাচকরস উৎপাদনে সহায়তা করায় হজম প্রক্রিয়া দ্রুত হয়, রক্ত সংবহন ও রেচনতন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দিপক হিসেবে কাজ করে। ওমেগা আলফা-৩, ও ওমেগা আলফা-৬ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে কাজ করে শরীরে উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সরিষার তেলে মনোস্যাচুরেট ও পলিস্যাচুরেট ফ্যাট মানবদেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, সরিষার তেল ৭০% হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। সরিষার তেলে ভিটামিন ই এন্টি অক্সিডেন্ট উপস্থিত এটি ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মী থেকে রক্ষা করে ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। সরিষার তেলে উচ্চমাত্রায় বিটা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম,আয়রণ ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা চুলের বৃদ্ধি ও অকালপক্বতা রোধে সহায়ক। সরিষার তেলে গ্লুকোসিনোলেট যা এন্টিকারসিনোজেনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেসটাইনাল ঝঁকি কমায় । সরিষার তেল অ্যাজমা ও সাইনোসাইটোসিসের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। ঠান্ডা, কাশি নিরাময় ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। সরিষার তেলের অ্যলাইল আইসোথায়োসায়ানেট এন্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকে যা ছত্রাক ইনফেকশন নিরাময়ে কাজ করে। সরিষার তেলে থাকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থায়ামিন ও রিবোফ্লাভিন যা খাবার দ্রুত হজম করে ও শরীরে ওজন কমাতে সহায়তা করে। সরিষার তেলে রয়েছে ফসফরাস যা ক্যালসিয়ামের মত শরীরে পিএইচের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। মানবদেহে এসিডের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে এত লিভারের কার্যকারীতা বাড়ায়।
সরিষার তেলে বিদ্যমান ইরুসিক এসিড (৩২-৪৭%) এটি অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহারে ফুসফুসের ক্ষতি করে ও ওমেগা-৯ ফ্যাটি এসিড মানব শরীরের পক্ষে বিষ, মায়োকার্ডিয়াল লিপিডোসিস, ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরী করে হার্টের ক্ষতি করে। কোম্পানিগুলো সরিষার তেল শোধন করলে তৈরী হয় আইসোথায়োসায়ানেট যা ফুসফুস ও গ্যাস্ট্রোইনটেসটাইনাল ট্রাক্ট এ প্রদাহ তৈরি করে । এর ফলে সরিষার তেলের প্রতি ক্রেতারা আগ্রহ কমিয়ে সয়াবিন তেল ব্যবহার বাড়তে থাকে । সরিষার তেল শোধন না করে কম ইরুসিক এসিড সম্পন্ন সরিষার জাতের উদ্ভাবন, উদ্ভাবিত জাতসমূহের তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির প্রচার ও প্রসার অবশ্যক ।
মো. ইব্রাহীম আলী, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, বিনা ।