ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন: বাংলাদেশে দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও অন্যান্য অনিয়মের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। এরপরও, কৃষি খাতের সফলতা, মাছ চাষের উন্নয়ন, এবং উন্নত পশুপালনের কারণে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে টিকে আছে। তবে, সম্প্রতি কৃষি জমিতে রাসেল ভাইপারের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে যা কৃষিজ উৎপাদনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
রাসেল ভাইপার ও এর প্রভাব: রাসেল ভাইপার একটি বিষধর সাপ যা বাংলাদেশে কিছু অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। এটি সরাসরি মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং কৃষি জমিতে কাজ করা কৃষকদের জন্য এক বিশাল বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কামড় সাধারণত প্রাণঘাতী হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু অবধারিত।
কৃষিজ উৎপাদনের উপর প্রভাব: রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি কৃষি জমিতে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এর ফলে, কৃষকরা জমিতে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন যা উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া, বিষাক্ত সাপের কারণে ফসলের ক্ষতি ও পশুর উপর আক্রমণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা: কিছু মানুষ মনে করছেন যে, রাসেল ভাইপারের এই উপদ্রব কোনো ষড়যন্ত্রের ফল হতে পারে। তবে এ ধরণের ধারণার পেছনে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। সাধারণত, রাসেল ভাইপারের সংখ্যা বাড়ার কারণ হতে পারে পরিবেশগত পরিবর্তন, খাদ্য শৃঙ্খল ও বাসস্থান সংকট।
করণীয়: ১। রাসেল ভাইপার নির্মূল অভিযান: যেখানেই রাসেল ভাইপার পাওয়া যাবে সেখানেই তা মারতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে সাপ নিধন কর্মসূচি চালু করা প্রয়োজন। ২। প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা: কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রাসেল ভাইপার থেকে নিরাপদ থাকার উপায় শেখানো উচিত। পাশাপাশি, সাপের উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। ৩। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: কৃষি জমি ও বাসস্থানে সাপ ঢুকতে না পারে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যেমন, জমিতে ফাঁদ পেতে রাখা বা নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা। ৪। চিকিৎসা সেবা: রাসেল ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রতিটি অঞ্চলে এন্টি-ভেনম (বিষের প্রতিষেধক) সরবরাহ নিশ্চিত করা।
পরিশেষে, বাংলাদেশের কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। রাসেল ভাইপারের উপদ্রব এই খাতের জন্য এক বিরাট হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে কৃষিজ উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই সমস্ত প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য রাসেল ভাইপার নির্মূল ও প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে, দেশের কৃষি খাতকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
লেখক: প্রফেসর, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়