নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সারা দেশে প্রায় ৬২ হাজার ৭৮৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৩৭ হাজার ২৩৪ জন কৃষক। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ৬০ কোটি টাকা। একইভাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সারা দেশের কৃষিকে মোট ১৪টি অঞ্চলে ভাগ করে সম্প্রসারণের কাজ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। গত ২৬ ও ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালের থাবায় উপকূলীয় অঞ্চল তছনছ হয়ে যায়। কৃষি ফসলের আর্থিক ক্ষতি এক হাজার ৬০ কোটি টাকা। এর প্রভাব পড়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলও। ডিএইর সরেজমিন উইং সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চলের মোট ৬২ হাজার ৭৮৩.৮২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে আউশের বীজতলা, পেঁপে, কলা ও সবজিই সবচেয়ে বেশি।
ডিএইর হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বরিশাল ও খুলনা কৃষি অঞ্চলে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) মহাপরিচালক (ডিজি) বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমাদের হাতে রাজস্ব বাজেট থেকে এক কোটি ৪৮ লাখ টাকা হাতে রয়েছে। এটি দিয়ে পুনর্বাসনের জন্য অনুমোদনের (কৃষি মন্ত্রণালয়) অপেক্ষায়। এর বাইরে বর্তমান অর্থবছরেই কৃষককে পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে আরো ৪৩ কোটি টাকা চাওয়া হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। এই অর্থ ছাড় দিলে আমনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করা হবে। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরেও শীতকালীন (শাকসবজি) সময়ে কৃষককে প্রণোদনা বা সহায়তা দেয়ার বিষয়েও প্রস্তাবনা দেয়া হচ্ছে। ক্ষতির তুলনায় সহায়তার পরিমাণ তো তাহলে কম- এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, সবাইকে তো সহায়তার আওতায় আনা সম্ভব নয়। যতটুকু পারা যায় করা হবে।
মৎস্য খাতে ক্ষতি ৯৮১ কোটি টাকা। মৎস্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় রেমালে মৎস্য খাতে মোট ৯৮১ কোটি ১৯ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বরিশাল ও খুলনার উপকূলীয় জেলাগুলোতে। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ৯৪০টি চিংড়ি ঘের ঘূর্ণিঝড়ে ভেসে গেছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৩৯ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর/দীঘির সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৬৭৫টি। আর্থিক ক্ষতি ৪১৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১০৭ কোটি টাকার পোনা মাছ পুকুর তলিয়ে ভেসে গেছে। ঝড়ে কাঁকড়া/কুচিয়া খামার তলিয়ে গেছে চার হাজার ৪১৭টি। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো: আলমগীর গতকাল রাতে নয়া দিগন্তকে জানান, প্রথমত. চাষিদের ক্ষতি যাতে কমানো যায়, আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। দ্বিতীয়ত. ক্ষয়ক্ষতিটা নিরূপণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিভাবে এই ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পুনর্বাসন করা যায় তাদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে লিড দিচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তাই তাদের মাধ্যমেই পুনর্বাসন করা হতে পারে।
প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি ৬২ কোটি টাকা। ঘূর্ণিঝড় রেমালে প্রাণিসম্পদ খাতে মোট প্রায় ৬২ কোটি (৬১ কোটি ৯২ লাখ ৩৩ হাজার ৭১৬) টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় গবাদি পশুর খামার সংখ্যা ৩ হাজার ২৫২টি। গবাদি পশু সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৬৫টি। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৯ কোটি ২২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৮ টাকা। হাঁস-মুরগির খামার সংখ্যা ১০ হাজার ১৫৭টি, আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৮ কোটি ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ৩০০ টাকা। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলে পশুপাখির দানাদার খাদ্যের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৮ লাখ ৫২ হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়া ঝড়ের পানিতে ভেসে যাওয়া খড়ের আর্থিক পরিমাণ ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য কৃষক ঘাস চাষ করেছিলেন, যা পানিতে বিনষ্ট হয়েছে। এর আর্থিক পরিমাণ ৫ কোটি ৪৯ লাখ ৮৬ হাজার ৯২০ টাকা। এ ছাড়া এই ঝড়ে বিপুল পরিমাণ পশুপাখি মারা গেছে। যার আর্থিক পরিমাণ ১৮ কোটি ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩১৮ টাকা।