Monday, October 14, 2024
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
spot_img
HomeColumnবিসিএস এবং বর্তমান প্রজন্মের উন্নয়ন ও দূর্নীতি!

বিসিএস এবং বর্তমান প্রজন্মের উন্নয়ন ও দূর্নীতি!

Print Friendly, PDF & Email

ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন: বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) কর্মকর্তারা দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাদের কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তগুলো দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বিসিএস কর্মকর্তাদের দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হল:১. নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন: বিসিএস কর্মকর্তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারী সংস্থায় নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, পরিবহন, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক হয়। ২. প্রশাসনিক দক্ষতা ও সুশাসন: প্রশাসনিক দক্ষতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য বিসিএস কর্মকর্তারা কাজ করেন। তারা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ও কার্যক্রম তদারকি করেন এবং জনগণের সেবা নিশ্চিত করেন। এতে করে সরকারি সেবা জনগণের কাছে দ্রুত ও সহজে পৌঁছায়। ৩. আইন শৃঙ্খলা রক্ষা: পুলিশ, প্রশাসন এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় বিসিএস কর্মকর্তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা অপরাধ দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেন। ৪. দুর্নীতি প্রতিরোধ: বিসিএস কর্মকর্তারা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন। তারা সরকারের অভ্যন্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেন। ৫. উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা: বিসিএস কর্মকর্তারা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করেন যা দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়ক হয়। তারা রাস্তা, ব্রিজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদি নির্মাণ ও উন্নয়নে কাজ করেন। ৬. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিসিএস কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকেন। এছাড়া, তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ৭. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় বিসিএস কর্মকর্তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তারা দুর্যোগ পূর্বাভাস, বিপর্যয়কালীন সেবা প্রদান এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ৮. স্থানীয় সরকার উন্নয়ন: স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে বিসিএস কর্মকর্তারা স্থানীয় জনগণের উন্নয়নে কাজ করেন। তারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। ৯. বৈদেশিক সম্পর্ক ও কূটনীতি: বিসিএস কর্মকর্তারা বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেন। তারা বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা ও উন্নয়নে, আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর এবং বৈদেশিক সাহায্য সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বিসিএস নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের কথা! বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষার প্রতি বর্তমান প্রজন্মের ব্যাপক আগ্রহ এবং এই পরীক্ষা নিয়ে তাদের পাগলামির পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। এই কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় কেন এত শিক্ষার্থী বিসিএস নিয়ে এতো তোড়জোড় করছে, যদিও চাকরির সুযোগ সীমিত।

বিসিএসের প্রতি আগ্রহের কারণসমূহ: ১. সামাজিক মর্যাদা ও সম্মান: বিসিএস ক্যাডার হিসেবে চাকরি পাওয়া মানে সমাজে উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী হওয়া। এটি বাংলাদেশে একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়। ২. আর্থিক স্থিতিশীলতা: বিসিএস ক্যাডাররা উচ্চ বেতন, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা পান, যা আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। ৩. চাকরির নিরাপত্তা: সরকারি চাকরি হওয়ায় বিসিএস ক্যাডারদের চাকরির নিরাপত্তা বেশি থাকে। প্রাইভেট চাকরির মতো এখানে চাকরি হারানোর ভয় থাকে না। ৪. সুযোগ-সুবিধা: বিসিএস ক্যাডাররা অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা পান যেমন- সরকারি বাসস্থান, গাড়ি, চিকিৎসা সুবিধা ইত্যাদি। ৫. প্রভাব ও ক্ষমতা: বিসিএস ক্যাডারদের ক্ষমতা ও প্রভাব বেশি থাকে। তারা প্রশাসনিক ও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ পান।

দুর্নীতি ও বিসিএস পরীক্ষার প্রতি আগ্রহ: দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্যা: বর্তমানে অনেক বিসিএস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি করলে দ্রুত ধনী হওয়ার সুযোগ থাকার কারণে কিছু শিক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষার প্রতি আগ্রহী হতে পারে। তবে এটি সব শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অনেকেই আন্তরিকতা ও সেবার মনোভাব নিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ: প্রতিযোগিতা: বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে তিন লাখেরও বেশি এবং চাকরির পোস্ট মাত্র ৩ হাজার, যা ১% সম্ভাবনারও নিচে। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী হতাশায় ভোগে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়। বিকল্প কর্মসংস্থান: প্রতিযোগিতার তীব্রতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে বিকল্প কর্মসংস্থানের কথা ভাবতে হয়। বিসিএস পরীক্ষা ব্যর্থ হলে তারা প্রাইভেট সেক্টর, উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সিং, এবং অন্যান্য কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজতে পারেন। দক্ষতা উন্নয়ন: শিক্ষার্থীদের উচিত বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন এবং নতুন প্রযুক্তি ও ট্রেন্ড সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা, যা তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানে সহায়ক হতে পারে।

বিসিএস পরীক্ষার প্রতি আগ্রহের প্রধান কারণ সামাজিক মর্যাদা, আর্থিক স্থিতিশীলতা, চাকরির নিরাপত্তা, এবং সুযোগ-সুবিধা। প্রতিযোগিতার তীব্রতা এবং চাকরির সুযোগ সীমিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে ভাবতে হবে এবং দক্ষতা উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ভবিষ্যতে এই শিক্ষার্থীরা তাদের কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে পারবে।

লেখক: প্রফেসর, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments