রোগের নামঃ
গমের গোড়া পচা রোগ Foot Rot of Wheat (Sclerotium rolfsii)
লক্ষণঃ
- এ রোগের ফলে বীজে পচন ধরে ধরে। চারা ঝলসে যায় এবং গোড়া ও শিকড় পচে যায়।
- চারা অবস্থায় আক্রান্ত হলে প্রথমে কান্ডের নীচের দিকের পাতা হলুদ হয়ে আসে পরে ক্রমশ উপরের দিকের পাতায়ও ছড়িয়ে পড়ে।
- গাছটি হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং আস্তে আস্তে মারা যায়। এ অবস্থায় গাছটি টান দিলে সহজেই মাটি হতে উঠে আসে।
- আক্রান্ত গাছটির গোড়া ভালোভাবে পরীক্ষা করলে এতে সাদা বর্ণের তুলার মত ছত্রাকের মাইসেলিয়াম এবং কখনও সরিষার দানার মত স্কেলেরোসিয়া দেখা যায়।
- শিকড় ও কাণ্ড – সংলগ্ন অংশে লালচে বাদামী দাগ দেখতে পাওয়া যায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- চারা লাগানোর ৫-৭ দিন আগে ট্রাইকো-কম্পোস্ট মাটিতে ভালভাবে মিশিয়ে এ রোগ দমন করা যায়।
রোগের নামঃ
গমের ব্লাস্ট রোগ Blast of Wheat (Magnaporthe oryzae pathotype triticum)
লক্ষণঃ
- এ রোগের জীবাণু গাছের উপরের সব অংশে আক্রমণ করতে পারে। তবে গমের শীষে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
- প্রাথমিকভাবে গম ক্ষেতে প্যাঁচ আকারে শীষ সাদা হওয়া দেখা যায়, অনুকূল আবহাওয়ায় অতি দ্রুত তা সারা ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে।
- গমের শীষ বের হওয়া থেকে ফুল ফোটার সময়ে বৃষ্টিপাত হলে এবং এর পরপরেই তুলনামূলক গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া বিরাজমান থাকলে এ রোগের আক্রমণ ঘটতে পারে।
- শীষের আক্রান্ত স্থানে কালো দাগ পড়ে, আক্রান্ত স্থানের উপরের অংশ সাদা হয়ে যায় এবং শীষের গোড়ায় আক্রমণ হলে পুরো শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যায়।
- আক্রান্ত শীষের দানা অপুষ্ট হয় ও কুঁচকে যায় এবং দানা ধূসর বর্ণের হয়ে যায় ।
- পাতায়ও এ রোগের আক্রমণ হতে পারে তবে এক্ষেত্রে পাতায় চোখের ন্যায় ধূসর বর্ণের ছোট ছোট পানি ভেজা দাগ পড়ে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- ব্লাস্টমুক্ত ক্ষেত থেকে গম বীজ সংগ্রহ করা।
- উপযুক্ত সময়ে (১৫-৩০ নভেম্বর) বীজ বপন করা যাতে শীষ বের হওয়ার সময়ে বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা পরিহার করা যায়।
- অপেক্ষাকৃত কম সংবেদনশীল জাত যেমন-বারি গম-৩০ ও বারি গম-৩৩ জাতের চাষ করা।
- গমের ক্ষেত ও আইল আগাছামুক্ত রাখা।
- প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি (৩ গ্রাম/কেজি) দ্বারা বীজ শোধন করা।
- ছত্রাকনাশক নাটিভো ৭৫ ডব্লিউ জি ৬ গ্রাম অথবা ফলিকুর ২৫০ ইসি ১০ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে শীষ বের হওয়ার সময় একবার এবং তার ১২-১৫ দিন পর পর আরেকবার স্প্রে করা।
রোগের নামঃ
গমের পাতা ঝলসানো রোগ Leaf Blight Disease of Wheat (Bipolaris sorokininana)
লক্ষণঃ
- পাতায় বাদামী ফুসকুরী আকারে দাগ দেখা যায়।
- পরে এসব দাগগুলো একমেত্র মিশে যায় এবং সম্পূর্ণ পাতা পোড়া দেখায়।
- আক্রমণ বেশী হলে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ফলন কমে যেতে পারে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
- বীজ বপনের পূর্বে প্রোভেক্স বা বিটাভেক্স ২০০ (১০০ গ্রাম/কেজি বীজ) দ্বারা শোধন করা।
- আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যথা প্রোপিকোনাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি) ১ মিঃ লিঃ প্রতি লিটার পানিতে।
রোগের নামঃ
গমের পাতার মরিচা রোগ Leaf Rust of Wheat (Puccinaia graminis tritici)
লক্ষণঃ
- গমের কান্ড, পাতা ও পর্বসন্ধিতে এ রোগ দেখা যায়।
- রোগের আক্রমণে লোহার মরিচার মতো লালচে রঙের দাগ পড়ে।
- দাগগুলো পরে কালো রঙ হয়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- আক্রান্ত ক্ষেতের নাড়া পুড়িয়ে ফেলা।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
- সুষম সার ব্যবহার করা।
- বীজ বপনের পূর্বে বীজ শোধন করা যথা ৩ গ্রাম প্রোভেক্স বা ভিটাটেক্স বা ২ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন/ কেজি বীজ।
- অনুমোদিত বালাইনাশক ব্যবহার করা যথা টিল্ট ২৫০ ইসি ১ মিলি বা ক্যাালিক্সিন ০.৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
রোগের নামঃ
গমের ঝুল রোগ Loose Smut of Wheat (Ustilago tritici)
লক্ষণঃ
- গমের শীষে এ রাগ দেখা যায়।
- আক্রান্ত শীষের গায়ে অসংখ্য পাউডারের মতো কালো গুঁড়া দেখা যায়।
- আক্রমন তীব্র হলে শীষ থেকে গমগুলো ঝরে পড়ে এবং শীষ দানাশুন্য যায়।
- বাতাসের সাহায্যে এ রোগ ছড়ায়।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- রোগমুক্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
- আক্রান্ত শীষ দেখা মাত্র সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলা।
- বীজ বপনের পূর্বে বীজ শোধন করা যথা ৩ গ্রাম প্রোভেক্স বা ভিটাটেক্স বা ২ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন/ কেজি বীজ।
- ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা। যেমন ব্যাভিষ্টিন- ১ গ্রাম/ লিটার পানি।