আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ: সবজি ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফসলের বীজ বপন বা চারা রোপণ থেকে শুরু করে ফসলের বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা প্রকার রোগবালাই আক্রমণ করে থাকে। রোগের আক্রমণের ফলে ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, পাতা ঝরে যায়, শাখা প্রশাখা দূর্বল হয়ে পড়ে। ফলন কম হয় এমনকি গাছের মৃত্যুও ঘটে থাকে। তাই এ সব রোগ থেকে ফসল রক্ষা করা প্রয়োজন। আর এ রোগগুলি হয়ে থাকে সাধারনত: ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও নেমাটোড জাতীয় অনুজীবের আক্রমণে। সবজি ফসলের প্রধান প্রধান রোগগুলি হলো; ড্যাম্পিং অফ, নেতিয়ে পড়া বা উইল্ট, এনথ্রাকনোজ, ডাই-ব্যাক, ফল পঁচা, মরিচা, ব্যাকটেরিয়াল রট, কান্ড পঁচা, লিফ কার্ল, রটনট নেমাটোড, ক্ষুদ্রাকৃতির পাতা, নাবী ধ্বসা, আগাম ধ্বাসা, পাউডারী মিলডিও, ডাউনি মিলডিও, মোজাইক রোগ ও পাতায় দাগ রোগ প্রভৃতি । নিম্নে সবজি ফসলের প্রধান প্রধান রোগগুলোর কারণ, লক্ষন ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১। ঢলে পড়া রোগ বা ড্যাম্পিং অফ
লক্ষন: সাধারনত বীজতলায় এ রোগ বেশী দেখা দেয়। ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং আক্রান্ত চারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মাটি সব সময় স্যাঁতসেঁতে থাকলে, ক্রমাগত মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজ করলে এবং বায়ু চলাচলের বিঘ্ন ঘটলে এ রোগের আক্রমণের আশংকা বেশী থাকে। বপনকৃত বীজ এবং চারা উভয়ই ঢলে পড়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বীজে আক্রমণ হলে বীজ গজায় না। চারায় আক্রমণ হলে প্রথমে আক্রান্ত চারা ফ্যাকাশে দেখা যায় এবং কান্ডের গোড়ায় বাদামী রং এর ভেজা দাগ দেখা যায়। পরে ভেজা দাগ কান্ডের চারিদিকে বিস্তৃত হয়। পরবর্তীতে উহা কান্ডের উপরে এবং নীচের দিকে ছড়ায়ে পড়ে। চারার কান্ড মাটির কাছাকাছি চিকন হযে পড়ে। চারার গায়ে ছত্রাকের উপস্থিতি দেখা যায়। আক্রান্ত অংশ পঁচে যায়। চারার গোড়া চিকন, লিকলিকে হয়ে ঢলে পড়ে এবং মারা যায়।
প্রতিকার:
* সূর্যালোক এবং বায়ুময় স্থানে বীজ তলা তৈরি করা
* বীজতলা স্যাঁতসেঁতে হতে না দেয়া
* বীজ পাতলা করে বোনা
* বীজতলায় বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা থাকা
* রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা
* একই বীজতলা বার বার ব্যবহার না করা
* চারা গজানোর পর অতিরিক্ত সেচ না দেয়া
* আইলের মাটি নিড়ানি বা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আলগা করে শুকিয়ে ফেললে রোগের আক্রমণ কমে যায়।
* বীজতলায় বীজ বপনের এক সপ্তাহ আগে সজিনা গাছের পাতা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া
* বপনের পূর্বে বীজ শোধন করা (ভিটাভেক্স ২.৫ গ্রাম বা ব্যাভিষ্টিন ২ গ্রাম/প্রতি কেজি বীজ)
* বায়োফানজিসাইড- ট্রাইকোডারমা দিয়ে বীজ ও মাটি শোধন করা
* এ রোগের আক্রমন দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম ডাইথেন এম ৪৫ বা ৩ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন বা ৪ গ্রাম কুপ্রাভিট বা ২ গ্রাম চ্যাম্পিয়ন স্প্রে করা ।
২। নেতিয়ে পড়া রোগ বা উইল্ট
লক্ষন: ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া উভয় ধরনের জীবাণু দ্বারা এ রোগ সংক্রমিত হতে পরে। বাইরের লক্ষণ প্রায় একই রকম হবে ভিতরের লক্ষনে ভিন্নতা বিদ্যামান। ছত্রাকের আক্রমণে গাছের নরম অংশ যেমন কচি পাতা, ডগা প্রথমে দুপুরে রোদের সময় ঢলে পড়তে দেখা যায়। দু’এক দিন পর সম্পূর্ণ গাছ ঢলে পড়ে এবং মারা যায়। এ রোগের লক্ষণের সাথে গাছের পানির অভাবজনিত লক্ষনের তুলনা চলে। ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে গাছে ঢলে পড়া লক্ষণ খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ পায় এবং ছত্রাকজনিত জীবানুর চেয়ে খুব অল্প সময়ে গাছ মারা যায়। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে সম্পূর্ন গাছ একসাথে ঢলে পড়ে কিন্তু ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রথমে গাছের এক পাশ্ব বা কয়েকটি শাখা ঢলে পড়ে এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সম্পূর্ন গাছ ঢলে পড়ে। গাছে যখন ফুল-ফল ধরা শুরু হয় তখন এ রোগের আক্রমণ হয়। আক্রান্ত গাছের কান্ডের নি¤œাংশ পরীক্ষা করলে দেখা যাবে বাকলের নীচে জাইলেমে কালো রংয়ের দাগ পড়েছে।
প্রতিকার:
* রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করা
* আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে ফেলা
* মাটি স্যাঁসেঁতে হতে না দেয়া ও নিয়ন্ত্রিত সেচ দেয়া
* শস্য পর্যায় অবলম্বন করা
* বেগুনের ক্ষেত্রে গ্রাফটেড চারা লাগানো
* জমি তৈরির সময় একর প্রতি ৩ কেজি কার্বোফুরান মাটির সাথে মিশিয়ে বা গাছের চারা লাগানের পূর্বে গোড়ায় ৫ গ্রাম ফুরাডান ৫ জি ব্যবহারে রোগের আক্রমন কম হয়
* ভিটাভেক্স বা ব্যাভিষ্টিন (২ গ্রাম/প্রতি কেজি বীজ) দ্বারা বীজ শোধন করা
* বায়োফানজিসাইড- ট্রাইকোডারমা দিয়ে বীজ ও মাটি শোধন করা
* প্রতি লিটার পানিতে ৩-৪ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন দ্বারা ১৫-২০ মিনিট চারা শোধন করা
* চারা রোপনের ২০-২৫ দিন আগে বিঘা প্রতি ২.৬ কেজি বিলচিং পাউডার মাটিতে প্রয়োগে ব্যাকটেরিয়াজনিত উইল্ট কম হয়।
৩। এনথ্রাকনোজ
লক্ষন: ছত্রাকজনিত এই রোগ পাতায় এবং ফলে প্রথমে হলুদ বর্ণের ক্ষুদ্র দাগ হিসেবে প্রকাশ পায়। পরে এ সব দাগ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বাদামী বা কালো বর্ণ ধারণ করে। একাধিক দাগের সমন্বয়ে বড় দাগের সৃষ্টি হয়। গাছ নেতিয়ে পড়ে। ডাটা বা শাখা ফেঁটে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অতি মাত্রায় নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করলে এ রোগ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া মাটি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে এবং বৃষ্টিপাত বেশী হলে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকারঃ
* রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা
* শস্য চক্র অনুসরণ করা
* আক্রান্ত গাছ ও আক্রান্ত পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলা
* ভিটাভেক্স ২০০ বা ব্যাভিষ্টিন (২-৩ গ্রাম/প্রতি কেজি বীজ) দ্বারা বীজ শোধণ করা
* কম নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করা
* রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট বা ৪ গ্রাম কুপ্রাভিট বা ২ গ্রাম টপসিন এম ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করা ।
৪। ডাই ব্যাক
লক্ষন: ছত্রাক প্রধানতঃ গাছের শাখার অগ্রভাগ আক্রমণ করে গভীর দাগের সৃষ্টি করে পরিবাহী টিসু নষ্ট করে দেয়। ফলে শাখার অগ্রভাগ উপরের দিক থেকে মরতে মরতে নীচের দিকে অগ্রসর হয়্ আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে সম্পূর্ন গাছ মারা যায়। ছত্রাক পাকা ফলও আক্রমণ করে। আক্রান্ত ফলে প্রথমে কালো গোলাকার দাগ সৃষ্টি করে। ক্রমে ইহা ফলের দৈর্ঘ্য বরাবর লম্বা হতে থাকে এবং মেটো বর্ণ ধারণ করে।
প্রতিকারঃ
* আক্রান্ত অংশ কেটে পুড়ে ফেলা
* সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করা
* রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট বা ৪ গ্রাম কুপ্রাভিট বা ২ গ্রাম টপসিন এম ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করা ।
৫। মরিচা রোগ
লক্ষন: পাতার নীচে সাদা অথবা হলুদ দাগ দেখতে পাওয়া যায়। পরে সেগুলো লালচে বা মরিচা রং ধারণ করে। পরে পাতা মারা যায়।
প্রতিকারঃ
* রোগ প্রতিরোধী জাতের ব্যবহার করা
* আক্রান্ত অংশ ধ্বংস করা
* শস্য পর্যায় অবলম্বন করা
* সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক বা ডাইথেন এম ৪৫ ০.২% হারে ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করা ।
৬। কান্ড পঁচা রোগ
লক্ষন: ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। রোগের আক্রমণের ফলে প্রথমে গাছের গোড়ায় এবং কান্ডে বাদামী হতে কালো রংয়ের দাগ পড়ে। এ দাগগুলি লম্বালম্বিভাবে বৃদ্ধি পেয়ে কান্ডের চারিদিকে বিস্তার লাভ করে। ফলে কান্ড পঁচে গাছ মরে যায়। আক্রান্ত স্থানে সাদা সূতার মত রোগ জীবাণু খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায়। মাটি বেশী স্যাঁতসেঁতে থাকলে এ রোগ বিস্তার লাভ করে এবং অন্য গাছকে আক্রমণ করে।
প্রতিকারঃ
* রোগমুক্ত বীজ এবং চারা ব্যবহার করা
* আইল স্যাঁতসেঁতে হতে না দেয়া
* রোগাক্রান্ত গাছের গোড়ায় ছাইমিশ্রিত পটাশ সার ব্যবহার করা
* কুপ্রাভিট ৪ মিলি বা চ্যাম্পিয়ন ২ গ্রাম বা টিল্ট ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় স্প্রে করা ।
৭। লিফ কার্ল
লক্ষন: এই রোগের আক্রমণে পাতার কিনারা উপরের দিকে বা নীচের দিকে মোচড়িয়ে যায়। পাতার শিরাগুলি স্বচছ হয়ে উঠে। মোচড়ানো পাতা সুস্থ পাতার চেয়ে ঘন হয় এবং খসখসে ও শক্ত হয়ে যায়। ফল কম ধরে এবং বড় হয় না।
প্রতিকারঃ
* রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার
* রোগাক্রান্ত গাছ শিকড়সহ তুলে পুড়ে ফেলা
* ভাইরাসের বাহক জাব পোকা, জ্যাসিড পোকা দমনের জন্য ডায়ামেথেয়ট, এসাটাফ, এডমায়ার প্রভিতির যেকোন একটি ব্যবহার করা
* শস্য পর্যায় অবলম্বন করা
৮। রুট নট
লক্ষন: আক্রান্ত গাছের শিকড়ে গিটের সৃষ্টি হয়। গাছ দুর্বল হয়, বৃদ্ধি কম হয় এবং ফলন কম হয়। সুস্থ গাছের তুলনায় আক্রান্ত গাছ খাটো ও নিস্তেজ হয়। আক্রামণের ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে গাছের পাতা মরে যায় এবং ক্রমে গাছও মরে যায়।
প্রতিকারঃ
* রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করা
* শস্য পর্যায় অবলম্বন করা
* মুরগীর বিষ্টা, কাঠের গুড়া বা কম্পোস্ট সার মাটিতে ব্যবহার করা
* ফুরাডান ৫জি ৮ কেজি/হে বা ৫ গ্রা/পিট হিসাবে বীজ বা চারা রোপনের পূর্বে ব্যবহার করা
৯। ক্ষ’দ্রাকৃতির পাতা
লক্ষন: আক্রান্ত গাছে ক্ষ’দ্রাকার, সরু, নরম ও হালকা বর্ণের অসংখ্য পাতা জন্মে। গাছের শাখা প্রশাখার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। গাছ ঝোপালো আকৃতি ধারণ করে, গাছ খর্বাকৃতির হয়। পাতা দুর্গন্ধযুক্ত হয়। গাছে ফুল ফল হয় না।
প্রতিকারঃ
* শিকড়সহ আক্রান্ত গাছ পুড়ে ফেলা
* বাহকপোকা জ্যাসিড দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে সুমিথিয়ন ১.৫ গ্রাম বা এমিায়ার ১.২ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করা।
১০। নাবী ধ্বসা
লক্ষন: আকাশ মেঘলাসহ গুটি গুটি বৃষ্টিপাত হলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। রোগের আক্রমণের ফলে প্রথমে পাতায় ফ্যাকাশে সবুজ রং এর দাগ পড়ে। পরবর্তী পর্যায়ে দাগগুলি বড় হযে কালো বা বাদামী রং ধারণ করে। আক্রান্ত পাতা পঁচে যায়। পাতা ভিতরের দিকে কুঁকড়িয়ে যায়। ফলের গায়ে দাগ পড়ে ও পঁচন ক্রিয়া দেখা দেয়। শুষ্ক আবহাওয়ায় আক্রান্ত অংশ মরে যায় কিন্তু আর্দ্র আবহাওয়ায় এ রোগ কান্ডে ছড়িয়ে পড়ে এবং গাছ ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে যায়। এভাবে এ রোগ অন্য গাছেও আক্রমণ করে।
প্রতিকারঃ
* রোগমুক্ত সুস্থ বীজ ব্যবহার করা
* বীজ শোধণ করা
* পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতি অবলম্বন করা
* মাটি স্যাঁতস্যাঁতে হতে না দেয়া
* রোগ প্রতিরোধী জাতের ব্যবহার করা
* রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ম্যানকোজেব ২.৫ গ্রাম হারে ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করা ।
* মেঘলা আবহাওয়ায় রিডোমিল গোল্ড, করমিল, মেটারিল, নিউবেন, সিকিউর, মেলোডি ডুও এর যেকোন একটি ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি সপ্তাহে স্প্রে করা ।
১১। আগাম ধ্বসা রোগ
লক্ষন: এ রোগের আক্রমণের ফলে প্রথমে পাতার উপর ইতস্তঃত বিক্ষিপ্ত ছোট ছোট অনেকগুলি দাগ দেখা দেয় দাগগুলি প্রথমে হালকা বাদামী বর্ণের হয়, পরে এই দাগ গাঢ় বাদামী রং ধারণ করে। দাগের মধ্যে অনেকগুলি চক্র দেখা যায়। পাতা কিছুটা কুঁকড়িয়ে যায় ও সব পাতায় দাগ ছড়ায়ে পড়ে। কিন্তু পাতা পঁচে না। এ রোগে গাছ সাধারনতঃ মরে না। কিন্তু ফল আকারে ছোট হয় এবং ফলন কমে যায়।
প্রতিকারঃ
* রোগমুক্ত সুস্থ বীজ ব্যবহার করা
* বীজ শোধন করা
* পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতি অবলম্বন করা
* মাটি স্যাঁতস্যাঁতে হতে না দেয়া
* রোগ প্রতিরোধী জাতের ব্যবহার করা
* রোগ দেখা দিলে রোভরাল বা ডাইথেন এম ৪৫ বা নেমিসপোর ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি সপ্তাহে স্প্রে করা
১২। পাউডারী মিলডিও
লক্ষন: এ রোগের জীবাণু প্রথমে গাছের বয়স্ক পাতায় আ¤্রমণ করে, পরে উপরের দিকে ছড়ায়। রোগের আক্রমণের ফলে পাতার উপরে ইতস্তঃত বিক্ষিপ্তভাবে এক প্রকার সাদাটে দাগ পড়ে। এগুলিকে সাদা পাউডারের মত মনে হয়। কিন্তু পাতার নীচের দিক থেকে দেখলে এ দাগগুলি ঈষৎ হলুদ রং এর দেখা যায়। ক্রমে ক্রমে দাগের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, দাগ আকারে বড় হতে থাকে এবং পাতার সব অংশেই বিস্তার লাভ করে। কয়েকদিনের মধ্যেই পাতার উপরের এবং নীচের দাগ বাদামী রং ধারণ করে। পাতা নিস্তেজ হয়ে মরে যায়। আক্রমণের ফলে গাচের ফল ছোট হয়, ফলন কমে যায়, অকালে পাকে, স্বাদ ও গন্ধ বিনষ্ট হয়ে যায়। পরিশেষে গাছ মারা যায়। শুষ্ক আবহাওয়ায় এ রোগ দ্রæত ছড়ায়।
প্রতিকারঃ
* আক্রান্ত অংশ তুলে পুড়ে ফেলা
* সঠিক দূরত্ব বজায় রেকে চারা রোপণ করা বা বীজ বপন করা
* রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা
* আগাছা দমন করা
* শস্য পর্যায় অনুসরণ করা
* রোগ দেখা দিলে সালফারজাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন সালফোটোক্র বা থিওভিট বা ম্যাকসালফার ০.২-০.৪% হারে স্প্রে করা
১৩। ডাউনি মিলডিউ
লক্ষন: এ রোগের আক্রমণের ফলে পাতার নীচের দিকে সাদা থেকে বেগুনী রংয়ের দাগ পড়ে এবং উপরের দিকে হলদেটে দাগ পড়ে। লক্ষ্য করলৈ পাতার নীচের দিকে ধূসর বা নীলচে রংয়ের পাতলা আস্তরণ দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা ও গাছ দূর্বল হয়ে মারা যায়। ফল কম ধরে, এমনকি ফল ধরা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রতিকারঃ
* আক্রান্ত অংশ তুলে পুড়ে ফেলা
* সঠিক দূরত্ব বজায় রেখে চারা রোপণ করা
* রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা
* বোর্দো মিক্সার বা ডাইথেন এম ৪৫ ০.২% হারে ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করা
১৪। ইয়েলো মোজাইক
লক্ষন: ভাইরাসের আক্রমণে গাছের পাতার শিরার রং হলুদ হয়ে যায়। পরে শিরার ঠিক পাশের অংশ গাঢ় সবুজ অথবা বাদামী রং ধারণ করে। ফলে পাতায় একটি নক্সার সৃষ্টি হয়। পরবর্তী পর্যায়ে পুরা পাতা হলদে হয়ে যায়। এ রোগের আক্রমণের ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফল ছোট, বিবর্ণ এবং নিকৃষ্ট মানের হয়। ফলন কম হয়। জাবপোকা, পাতা ফড়িং এবং হোয়াইট ফ্লাই ইত্যাদি পোকা এ রোগ ছড়ায়।
প্রতিকারঃ
* রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা
* আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে ফেলা
* আগাছা দমন করা
* কীটনাশক দিয়ে জেসিড এবং জাব পোকা দমন করা
* বপন সময় পিছিয়ে নেয়া
লেখকঃ প্রাক্তন চেয়ারম্যান, প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।